Our social:

Friday, February 3, 2017

টনসিল

গলায় ব্যথা হলেই আমরা বলে দিই, তোমার তো টনসিল হয়েছে। তো এই টনসিলটা কী? টনসিল হলো আমাদের শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থার একটা অংশ এবং আমাদের মুখের ভেতরেই চারটি গ্রুপে তারা
অবস্থান করে। এদের নাম লিঙ্গুয়াল, প্যালাটাইন, টিউবাল ও অ্যাডেনয়েড। এই টনসিলগুলোর কোনো একটির প্রদাহ হলেই তাকে বলে টনসিলাইটিস। ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নাক, কান, গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের প্রধান খবিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘টনসিল বলতে আমরা সচরাচর যা বুঝি, তা কিন্তু আসলে টনসিলাইটিস। টনসিলাইটিস যে শুধু শিশুদের হয়, তা নয়। এটা শিশুদের বেশি হলেও যেকোনো বয়সেই হতে পারে।
আর প্যালাটাইন টনসিলই সবচেয়ে বেশি প্রদাহ সৃষ্টি করে, ফলে গলা ব্যথা হয়।এই প্রদাহ সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি তীব্র বা অ্যাকিউট। আর অন্যটি দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টনসিলাইটিস।
রোগের লক্ষণ
lতীব্র গলাব্যথা।
lমাথাব্যথা, উচ্চ তাপমাত্রা।
lখাবার খেতে কষ্ট ও মুখ হাঁ করতে অসুবিধা হয়।
lকানে ব্যথা হতে পারে।
lমুখ দিয়ে লালা বের হয় ও কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যেতে পারে।
মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে পারে।
lস্বরভঙ্গ, গলায় ঘাসহ টনসিল স্ফীতি, ঢোঁক গিলতে কষ্ট হয়, গলা ফুলে যাওয়া।কারণ: পুষ্টির অভাব, আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা শীতল পানি বেশি পান করা টনসিলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে স্থানে বাস করলে, আবহাওয়ার পরিবর্তনে শীতের প্রকোপ বেশি হলে, রোদ থেকে এসে ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করলে, গরমে ঘাম বসে গেলে টনসিলের প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা: প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে যত দিন সুস্থ না হবে। মুখের হাইজিন (মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য) বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে। এটাকে মাউথ ওয়াশ বলা হয়, যা দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। সাধারণ স্যালাইন বা লবণ মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। লেবু বা আদা চাও খেতে পারেন। গলায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না। যেহেতু তীব্র ব্যথা থাকে এবং জ্বর থাকে, সে ক্ষেত্রে জ্বরের ওষুধসহ কিছু ওষুধ দেওয়া হয় এবং এটা ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। ওষুধ নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে যায় এবং রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলাইটিসের চিকিৎসা সাধারণত অস্ত্রোপচার। যদি বারবার টনসিলাইটিস হয় বা এর জন্য অন্য কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে টনসিল কেটে বা অস্ত্রোপচার করে ফেলাই ভালো।
কী কী কারণে টনসিলের অস্ত্রোপচার করা দরকার?
lদীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক টনসিলাইটিস
lটনসিল বয় হয়ে শ্বাসনালি বন্ধ হয়ে গেলে এবং নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হলে।
lটনসিলে যদি ফোঁড়া হয়, অর্থাৎ ইনফেকশন হলে।
lযদি বছরে চার-পাঁচবারের বেশি টনসিল ইনফেকশন হয়।
lএসব কারণ ছাড়াও যদি দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ক্রিপটোকঙ্কাল ইনফেকশন হয়
কখন অস্ত্রোপচার করা যাবে না
lঅ্যাকিউট ইনফেকশন থাকলে টনসিলে অস্ত্রোপচার করা যাবে না। কারণ, তখন ইনফেকশন সারা শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং রক্তপাত বন্ধ না-ও হতে পারে।
lজ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থায় করা যাবে না।
lযদি কারও রক্তরোগ থাকে, যেমন থ্যালাসেমিয়া। রক্তনালি এবং রক্তরোগ থাকলে টনসিলে অস্ত্রোচার করা যাবে না।এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ থাকলে অস্ত্রোপচার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে যদি করতেই হয়, তাকে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এনে অস্ত্রোপচার করতে হবে।
ডায়াবেটিস থাকলে অস্ত্রোপচার করা যাবে না। অস্ত্রোপচারের আগে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেআনতে হবে।
কিছু ভুল ধারণা
টনসিল ফেলে দিলে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, এটা ঠিক নয়। কারণ, টনসিল হলো প্রথম পাহারাদার। এর পরও গলায় ৩০০-এর বেশি লালাগ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড আছে, যেগুলো রোগ প্রতিরোধ করে। অনেক সমীক্ষায় দেখা গেছে, টনসিলে অস্ত্রোপচার করার আগে ও পরে রোগপ্রতিরোধে কোনো তারতম্য হয় না।
অনেক সময় গলার বাইরের দিকে দুই পাশে বরই বিচির মতো দুটি দানা ফুলে উঠতেও দেখা যায়, অনেকে এগুলোকে টনসিল মনে করলেও এরা কিন্তু টনসিল নয়। রোগী বড় করে মুখ হাঁ করলে ভেতরের দিকে যে দুটি বড় দানার মতো দেখা যায়, তা-ই হলো টনসিলাইটিসে আক্রান্ত টনসিল।